পৃষ্ঠা ২৪২
ষষ্ঠ অধ্যায়
বাংলাদেশে সমাজকল্যাণে জাতিসংঘ এজেন্সীগুলোর ভূমিকা

মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে মানবকল্যাণে আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ এক গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উদ্ভব এবং বিকাশ আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ ও সহযোগিতাকে অপরিহার্য করে তুলেছে। অতীতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক সংঘর্ষ এবং সহযোগিতা এ দু’টি ধারা নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সংঘর্ষের পথ পরিহার করে, মানুষ ক্রমশ সহযোগিতার পথে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বের মানুষ বুঝতে পেরেছে সংঘর্ষ নয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং সহযোগিতাই বিশ্বশান্তির নিয়ামক। এ উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পরিমন্ডলে শান্তি, অগ্রগতি ও কল্যাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অর্থবহ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশ্বের দরিদ্র ও অনুন্নত দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে শিল্পোন্নত ধনী দেশের আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য সংস্থা। বিশেষ করে জাতিসংঘের বিশেষ এজেন্সীগুলো সমাজকল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিশেষায়িত এজেন্সীগুলোর ভূমিকা আলোচনার প্রায়ম্ভে জাতিসংঘের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।
লীগ অব নেশনস বা জাতিসংঘ
সমাজকল্যাণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় ১৯২০ এর ১০ জানুয়ারি। বিশ্বের প্রথম প্রকৃত আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিক মানবসেবার বিশ্বায়ন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির প্রেক্ষাপটে ১৯১৯ সালের ২৮শে জুন সম্পাদিত ভার্সাই চুক্তির আলোকে জাতিসংঘ গঠিত হয়। বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের মহান লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘের যাত্রা শুরু হয়।
জাতিসংঘ
বিশ্বের বিভিন্ন জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা, সহযোগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার বৃহত্তর কল্যাণ নিশ্চিত করার মহান সঙ্কল্প নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ গঠিত হয়। উল্লেখ্য এর খাঁটি বাংলা, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। তবে জাতিসংঘ বহুল প্রচলিত বলে এটিই অধিক ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান, সদস্য দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে সহায়তাদানের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে জাতিসংঘ গঠিত।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা
১৯১৪ সালে সংঘটিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব মানবতা রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ সমাপ্তির পর ১৯২০ সালের ১০ই জানুযারি প্যারিস সম্মেলনের মাধ্যমে লীগ অব নেশন্স গঠিত হয়। কিন্তু স্বার্থান্বেষী কতিপয় বৃহৎ শক্তিধর দেশের জন্য তা সফল হতে পারেনি। লীব অব নেশন্স-এর ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলার মহাতান্ডব শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪১ সালের ১৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেন্ট এবং বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের লক্ষ্যে ‘আটলান্টিক সনদ’ সাক্ষর করেন। জার্মানী এবং তার অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য মিত্রশক্তির ২৬টি দেশ দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করে। ১৯৪২ সালের ১ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট বৃটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনের প্রতিনিধিরা একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন। এটি পরবর্তীকালে ‘সম্মিলিত জাতিসংঘের ঘোষণা’ নামে অভিহিত হয়। ১৯৪৩ সালে মস্কোতে মিত্র শক্তির অন্তর্ভুক্ত বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে নীতিগতভাবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুমোদিত হয়।
মস্কো সম্মেলনের আলোকে ১৯৪৪ সালে চারটি বৃহৎ শক্তিধর দেশের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের সাধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করেন। ১৯৪৫ সালের ২৫শে এপ্রিল হতে ২৬শে জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন হলো জাতিসংঘ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বশেষ স্তর। এ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতিসংঘ একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। সানফ্রান্সিসকো শহরে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনে মূলনীতিসমূহের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রদান করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত। সদস্য সংখ্যা একশত একানব্বইটি (২০০২ সালের তথ্যানুযায়ী)। প্রতি বছর ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ দিবস পালিত হয়।
সম্মিলিত জাতিসংঘ সনদের প্রস্তাবনার সূচনাতেই ঘোষিত হয়েছে ‘‘আমরা সম্মিলিত জাতিসংঘের জনগণ’’। এ মহান ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সকল মানুষকে এ আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে অভিন্ন সূত্রে গ্রথিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ সনদের প্রারম্ভিক ঘোষণা
জাতিসংঘ সনদের নিচে বর্ণিত প্রারম্ভিক ঘোষণা হতে এর ব্যাপক উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আমরা জাতিসংঘভুক্ত জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞঃ
ভবিষ্যত বংশধরদের যুদ্ধের অভিশাপ থেকে বাঁচাবার জন্য, যে অভিশাপ আমাদের জীবনকালে দু-দু’বার মানবজাতির নিকট অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা বহন করে এনেছে, এবং মৌল মানবিক অধিকার, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং ছোট-বড় জাতি ও স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান অধিকারের প্রতি আস্থা পুর্নব্যক্ত করার
পৃষ্ঠা ২৪৩
জন্য, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন চুক্তি ও আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন উৎসপ্রসূত বাধ্যবাধকতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার মতো অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য এবং ব্যাপকতর স্বাধিকারের মাধ্যমে সামাজিক অগ্রগতি সাধন ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য, এবং এতদুদ্দেশ্যে পরস্পর সুপ্রতিবেশী হিসেবে শান্তিতে বসবাস এবং সহিষ্ণুতার অনুশীলন করতে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের শক্তি সংহত করতে, এবং সাধারণ স্বার্থ ব্যতীত যে সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হবে না, এ বিষয় নীতি গ্রহণ ও পদ্ধতিগত ব্যবস্থার মাধ্যমে সুনিশ্চিত করতে, এবং সকল জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করতে। উল্লিখিত উদ্দেশ্যসমূহ চরিতার্থ করার জন্য আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি একত্র করতে স্থির সিদ্ধান্ত করেছি। অতএব, যথার্থরূপে যারা তাঁদের পূর্ণক্ষমতাপত্র প্রদর্শন করেছেন, সানফ্রান্সিসকো নগরীতে সমবেত সেই প্রতিনিধিবর্গের মাধ্যমে আমাদের নিজ নিজ সরকার জাতিসংঘের বর্তমান সনদ গ্রহণ করে এতদ্বারা জাতিসংঘ নামে অভিহিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে।
জাতিসংঘের উদ্দেশ্যগুলো হলো :
১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সংরক্ষণ এবং এতদুদ্দেশ্যে শান্তিভঙ্গের হুমকি নিবারণ ও দূরীকরণের জন্য এবং আক্রমণ অথবা অন্যান্য শান্তিভঙ্গকর কার্যকলাপ দমনের জন্য কার্যকর যৌথ কর্মপন্থা গ্রহণ এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আন্তর্জাতিক বিরোধ বা শান্তিভঙ্গের আশঙ্কাপূর্ণ পরিস্থিতির নিষ্পত্তি বা সমাধান;
২. বিভিন্ন জাতির মধ্যে সমঅধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণ নীতির ভিত্তিতে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের প্রসার এবং বিশ্বশান্তি দৃঢ় করার জন্য অন্যান্য উপযুক্ত কর্মপন্থা গ্রহণ;
৩. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা মানবিক বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহের সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকাশ সাধন এবং মানবিক অধিকার ও জাতিগোষ্ঠী, স্ত্রী-পুরুষ, ভাষা বা ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে উৎসাহ দান; এবং
৪. এসব সাধারণ উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য জাতিসমূহের প্রচেষ্টার সমন্বয় সাধনের কেন্দ্র হিসেবে কার্য পরিচালনা।
জাতিসংঘের মূলনীতি
জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য জাতিসংঘ এবং এর সদস্যবৃন্দ নিম্নলিখিত মূলনীতি অনুযায়ী কাজ করবে
১. সকল সদস্যের সার্বভৌমত্ব ও সমতার মূলনীতির ওপর এ সংগঠন প্রতিষ্ঠিত।
২. সদস্যপদের অধিকারসমূহ ও সুবিধাদি সকলের জন্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সদস্যগণ বর্তমান সনদ অনুযায়ী তাদের দায়-দায়িত্ব সরল বিশ্বাসে মেনে চলবে।
৩. সকল সদস্য তাদের আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে এমনভাবে নিষ্পত্তি করবে, যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বিঘ্নিত না হয়।
৪. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সকল সদস্য আঞ্চলিক অখন্ডতার বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের ভীতি প্রদর্শন থেকে এবং জাতিসংঘের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোন উপায় গ্রহণ করা থেকে নিবৃত্ত থাকবে।
৫. সকল সদস্য বর্তমান সনদ অনুযায়ী জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সমস্ত কর্মপ্রচেষ্টায় সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে এবং যেসব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ প্রতিষেধক বা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সে সব রাষ্ট্রকে সাহায্য দান থেকে বিরত থাকবে।
৬. জাতিসংঘ বহির্ভূত রাষ্ট্রসমূহও যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার খাতিরে এসব মূলনীতি অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করে সেজন্য সংগঠনটি সচেষ্ট থাকবে।
৭. বর্তমান সনদ জাতিসংঘকে কোনো রাষ্ট্রের নিছক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার দিচ্ছে না বা সেরূপ বিষয়ের নিষ্পত্তির জন্য কোন সদস্যকে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হতে হবে না; কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের কার্যক্রম অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে এ নীতি অন্তরায় হবে না।
জাতিসংঘের সাংগঠনিক শাখা
জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রধান ছ’টি শাখা রয়েছে। এ ছ’টি বিশেষ শাখা নিয়ে জাতিসংঘের সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ ছ’টি শাখা হলো
১. সাধারণ পরিষদ
২. নিরাপত্তা পরিষদ
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
৪. অছি পরিষদ
পৃষ্ঠা ২৪৪
৫. আন্তর্জাতিক আদালত
৬. সচিবালয়
নিচে এসব শাখাগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হলো
১. সাধারণ পরিষদ
জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো সাধারণ পরিষদ। এটি জাতিসংঘের আইন শাখা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদের অনুরোধে অথবা অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধে মহাসচিব বিশেষ অধিবেশন ডাকতে পারেন।
সাধারণ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী হলো
ক. জাতিসংঘ সনদের অন্তর্ভুক্ত এবং বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ বিভিন্ন সংস্থায় প্রেরণ; খ. নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ, নতুন সদস্য গ্রহণ এবং কোন সদস্যকে বহিস্কার করা; গ. জাতিসংঘের বাজেট পাস এবং অন্যান্য সংস্থার বাজেট অনুমোদন ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ; ঘ. অন্যান্য সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট গ্রহণ ও পর্যালোচনা করা; ঙ. জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নির্বাচন, আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক নির্বাচন করা।
২. নিরাপত্তা পরিষদ
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালন করে নিরাপত্তা পরিষদ। এটি জাতিসংঘের শাসন বিভাগ স্বরূপ। নিরাপত্তা পরিষদ পাঁচটি স্থায়ী সদস্য এবং দশটি অস্থায়ী মোট পনরটি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েট রাশিয়া ও চীন স্থায়ী রাষ্ট্র। অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো দু’বছরের জন্য সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়। নিরাপত্তা পরিষদ সার্বক্ষণিক সংস্থা। সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সর্বদা সদর দপ্তরে থাকতে হয়। স্থায়ী সদস্যদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোটো প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলী : নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। বিশ্ব শান্তির অভিভাবক হিসেবে নিরাপত্তা পরিষদের কার্যাবলীগুলো হলো ক. বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা; খ. বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; গ. জাতিসংঘের নতুন সদস্য গ্রহণ বা কোন সদস্যকে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা এবং ঘ. সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগে সুপারিশ প্রদান। এসব বহুমুখী কার্যাদী সম্পাদনের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে সদা সচেষ্ট।
৩. অছি পরিষদ
যে সব জনপদের পৃথক সত্তা রয়েছে কিন্তু সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা নেই এবং অন্য রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত, সে সব জনপদকে অছি এলাকা বলা হয়। জাতিসংঘের অছি পরিষদ বিশ্বের অছি রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করে। অছি এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিষয়াদি প্রভৃতির তত্ত্বাবধান ও সামগ্রিক উন্নতি বিধানের প্রচেষ্টা চালায় অছি পরিষদ।
৪. আন্তর্জাতিক আদালত
সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা নির্বাচিত ১৫ জন বিচারক নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত। এর সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে অবস্থিত। আন্তর্জাতিক আদালতের দায়িত্ব হলো- ক. জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক বিবাদ আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে মীমাংসা করা; খ. জাতিসংঘ সনদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করে বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষা করা; গ. জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বিরোধ মীমাংসা করা এবং ঘ. সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের অনুরোধে আন্তর্জাতিক আইন সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দান। উল্লেখ্য আন্তর্জাতিক আদালতের রায় বাস্তবায়নে কোন পক্ষ অস্বীকৃতি জানালে আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।
৫. সেক্রেটারিয়েট
জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ হলো সেক্রেটারিয়েট। জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগ, এজেন্সী ও বিশেষ সংস্থাগুলোর মধ্যে সার্বক্ষণিক সংযোগ রক্ষার দায়িত্ব সেক্রেটারিয়েটের ওপর ন্যস্ত। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল যিনি নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদের গোপন ভোটে নির্বাচিত হন, তাঁর নেতৃত্বে সেক্রেটারিয়েট গঠিত। তিনি কার্যনির্বাহী প্রধান হিসেবে নিরপক্ষে ভূমিকা পালন করেন।
৬. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
জাতিসংঘ সনদের আওতায় গঠিত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশেষ সংস্থাগুলোর কার্যাবলীর প্রধান সমন্বয়কারী অঙ্গ। জাতিসংঘ হলো মানব কল্যাণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং পারস্পরিক বুঝাপড়ার এক ঐতিহাসিক সংস্থা। বিশ্বের সকল দেশ ও জাতির পারস্পরিক সহযোগিতায় মানব সমাজের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যের অবসান ব্যতীত বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের অবসান এবং আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে মানবকল্যাণ নিশ্চিতকরণের মহান লক্ষ্যে গঠিত হয়
পৃষ্ঠা ২৪৫
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ । ১৯৪৫ সালে গৃহীত জাতিসংঘ সনদের আওতায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ গঠিত হয়। মানবিক এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি সামগ্রিক আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ ব্যবস্থার বিকাশের দায়িত্ব এ পরিষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভিত্তি এ পরিষদের মাধ্যমে স্থাপিত হয়। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কর্মক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক। এটি হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাজকল্যাণে সহযোগিতা সৃষ্টির অনন্য দৃষ্টান্ত।
উদ্দেশ্য : অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, বেকারত্বের প্রসার রোধ, শিক্ষার প্রসার এবং বিভিন্ন মৌলিক মানবাধিকার কার্যকর করার মহান লক্ষ্যে পরিষদ গঠিত। জাতিসংঘের মৌলিক নীতির সাথে সমন্বয় সাধন করে পরিষদ নিচের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে-
ক. উন্নত জীবনযাত্রার মান, পূর্ণ নিয়োগ এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
খ. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সমাধান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রসার সাধন।
গ. বর্ণ, ভাষা, ধর্ম এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা।
উদ্দেশ্য সাধনের কৌশল :
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করার কৌশল হিসেবে নিচের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় :
ক. জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র যৌথ এবং এককভাবে পরিষদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে উপরিউক্ত উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করবে।
খ. আন্তঃসরকারি চুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিশেষ উদ্দেশ্য সাধক সংস্থাগুলোকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিষদের সঙ্গে একযোগে কাজ করানোর ব্যবস্থা করা।
গ. পরিষদের উদ্দেশ্য অর্জনের প্রয়োজনে আন্তঃরাষ্ট্রীয় নতুন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধক সংস্থা গঠন করা।
বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যাবলী সম্পাদিত হয়।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ক্ষমতা এবং কার্যাবলী
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো :
১. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় সংশ্লিষ্ট আলোচনা এবং সদস্য রাষ্ট্র ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নের সুপারিশ প্রদানের কেন্দ্রীয় ফোরাম হিসেবে কাজ করা;
২. আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির ওপর গবেষণা পরিচালনা বা গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ, প্রতিবেদন প্রকাশ ও সুপারিশ প্রদান;
৩. মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ এবং এগুলোর সম্মান ও মর্যাদার উন্নয়ন;
৪. আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন এবং জেনারেল এসেম্বলীতে পেশ করার জন্য খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা;
৫. জাতিসংঘের বিশেষ এজেন্সীগুলোকে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান এবং সাধারণ পরিষদ ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদানের মাধ্যমে, সেগুলোর কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন;
৬. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ যেসব বিষয়াদি নিয়ে সংশ্লিষ্ট, সেসব বিষয়াদি নিয়ে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ-এর সমন্বয় কার্য শক্তিশালীকরণ বিশেষ করে ব্যাপক আর্থ-সামাজিক কার্যাবলীর সমন্বয় ব্যবস্থা; যার মধ্যে রয়েছে বিশ্ব সম্মেলনে গৃহীত ব্যবস্থাবলীর অনুসরণ এবং বাস্তবায়িত উন্নয়ন কার্যাবলী পর্যবেক্ষণ করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কর্মপরিচালনা পদ্ধতি
প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ একটি কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণকারী এবং সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিষদ জাতিসংঘ এবং বিশেষ সংস্থার কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। পরিষদের কার্যাবলীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুমোদিত বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে উপদেষ্টামূলক ব্যবস্থা করে থাকে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট তিনটি কমিটি এবং সাতটি আঞ্চলিক কমিটি। তিনটি কমিটি হলো ১. অর্থনৈতিক কমিটি ২. সামাজিক কমিটি ৩. কর্মসূচি এবং সমন্বয় সাধনকারী কমিটি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বর্তমানে নয়টি কার্যসম্পাদনকারী কমিশন রয়েছে। এসব কমিশনের শিরোনামই এগুলোর পরিচয় বহন করছে। কমিশনগুলো হলো-
পৃষ্ঠা ২৪৬
১. অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধীর বিচারক বিষয়ক কমিশন : এ কমিশনের উদ্দেশ্য হলো অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধ সংক্রান্ত নীতি বিষয়ে পরিষদকে পরামর্শ দান, অপরাধীদের প্রতি যথার্থ আচরণের ব্যবস্থা এবং এ বিষয়ে নিয়োজিত সব গবেষণা কেন্দ্রের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
২. পরিসংখ্যান কমিশন : এটি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় পরিসংখ্যান বিষয়ক কার্যাবলীর অগ্রগতি ও বিকাশে সাহায্য করে। পরিসংখ্যান বিষয়ে নির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারণ ও শব্দার্থ কোষ রচনা করা এ কমিশনের দায়িত্ব।
৩. জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ক কমিশন : এ কমিশন জনসংখ্যা সম্পর্কিত সমস্যা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে জনসংখ্যা সমস্যার সম্পর্ক বিষয়ে পরিষদকে পরামর্শ দেয়।
৪. সামাজিক উন্নয়ন কমিশন : সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসূচি পরিকল্পনা রচনা করা এ কমিশনের কাজ।
৫. মানবাধিকার কমিশন : এ কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো ছয়টি বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং সুপারিশ পেশ করা। এসব বিষয়গুলো হলো- ক. আন্তর্জাতিক অধিকার বিল খ. মৌল স্বাধীনতা গ. নারীর মর্যাদা ঘ. সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ ঙ. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও নারীপুরুষের সব ধরনের বৈষম্যের অবসান চ. মানব অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়। এ কমিশনের অধীনে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রতিরোধ এবং সংরক্ষণ-বিষয়ক সাব কমিশন রয়েছে।
৬. নারীর মর্যাদা বিষয়ক কমিশন : নারীর অধিকার প্রসার সম্বন্ধে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের নিকট প্রতিবেদন পেশ এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকার নীতি বাস্তবায়ন করা।
৭. মাদক জাতীয় ঔষধ বিষয়ক কমিশন : এ কমিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো মাদক জাতীয় ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে পরামর্শ দান। এ কমিশনের অধীনে মাদক দ্রব্যের বে-আইনী ব্যবসা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত একটি সাব-কমিশন রয়েছে।
৮. উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিশন : ১৯৯২ সালের ৩০শে এপ্রিল গঠিত এ কমিশনের লক্ষ্য হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তোলা। জাতিসংঘের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তি বিষয়ক কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন এবং কার্যাবলীর নির্দেশনা দানের ব্যবস্থা করা।
৯. স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়ন কমিশন : পরিবেশগত দিক হতে স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সাধারণ পরিষদ কর্তৃক টেকসই উন্নয়ন কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রথম সভা ১৯৯৩ সালে মিলিত হয়।
উপরিউক্ত কমিটি ও কমিশন ছাড়াও অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কতগুলো কমিটি, আঞ্চলিক কমিশন এবং সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে কার্য পরিচালনা করে থাকে।