Logo Sponsored by Chowdhury and Hossain, Advanced Publications

Somajkollan 2nd part 3rd chap read

পৃষ্ঠা ১৩৫

তৃতীয় অধ্যায়           
বাংলাদেশে প্রধান প্রধান সরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম
 

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গৃহীত, বাস্তবায়িত ও নিয়ন্ত্রিত সমাজকল্যাণ কার্যক্রমকে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রম বলা হয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিকল্প কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা সম্প্রসারণের ফলে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে জনকল্যাণকে গ্রহণ করা হয়েছে। নাগরিকদের মৌল চাহিদা পূরণ, ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশ, নিরাপত্তা ও কল্যাণ বিধান আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত। বিশ্বের সকল কল্যাণমুখী রাষ্ট্রই সুনির্দিষ্ট নীতি ও পরিকল্পনার আওতায় নাগরিকদের কল্যাণে বহুমুখী সমাজসেবা কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে পৃথক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আওতায় সার্বিক সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশে সরকারি সমাজকল্যাণ কর্মসূচির বিবর্তন
ব্রিটিশ শাসিত বাংলাদেশে ১৯৪৩ সালে সরকারি পর্যায়ে চারটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের সূচনা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসিত ভারত দু’ভাগ হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাংলাদেশ পাকিস্তানের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। যার নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। ভারত বিভিক্তির পর ভারত হতে আগত মোহাজেরগণ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে অভিবাসন গড়ে তুলে। এর ফলে শহর সমাজে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য ১৯৫৫ সালে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকা শহর কমিউনিটি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের সহযোগিতায় ঢাকার কায়েতটুলীতে ১৯৫৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শহর সমষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আধুনিক ও পেশাদার সমাজকল্যাণের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে স্বেচ্ছাসেবী সমাজসেবা কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের জন্য জাতীয় সংমাজকল্যাণ পরিষদ গঠন করা হয়। এ পরিষদ ১৯৫৭ সালে হাসপাতাল সমাজসেবা ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রবর্তন করে।
১৯৬১ সালে ত্রাণ মন্ত্রাণালয় হতে স্থানান্তরিত ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র; শিক্ষা পরিদপ্তর থেকে হস্তান্তরিত সরকারি এতিমখানা এবং সমাজকল্যাণ পরিষদ হতে হস্তান্তরিত হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর গঠন করা হয়। এ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সমাজকর্ম পরীক্ষামূলকভাবে অনুশীলন শুরু হয়।
১৯৬১ সালে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের সার্বিক প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব উক্ত পরিদপ্তরের ওপর দেয়া হয়। পরবর্তীতে সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর ১৯৭৮ সালে সমাজকল্যাণ বিভাগ হিসেবে উন্নীত হয়ে স্থায়ী জাতিগঠনমূলক বিভাগের মর্যাদা লাভ করে। তদানীন্তন পাকিস্তান আমল থেকে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দানের জন্য আন্তঃচাকরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, যার বর্তমান নাম জাতীয় সমাজসেবা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যাবলী সমাধানের লক্ষ্যে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সালে গ্রামীণ সমাজসেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে বিস্তার লাভ করে; যা আগে শহর এলকায় সীমাবদ্ধ ছিল। পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সমস্যাবলী সমাধানকল্পে সমাজকল্যাণ কার্যাবলি ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হয়। ফলে সরকার ১৯৮৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করেন। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটির সুপারিশক্রমে সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কাঠামো প্রসারণ করে এর নাম সমাজসেবা অধিদপ্তর রাখা হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশের সরকারি বেসরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচিতি
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পৃথক ও স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করার পূর্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ মন্ত্রণালয় হিসেবে সংযুক্ত ছিল। সাবেক পাকিস্তান আমলে এ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং শ্রম, জনশক্তি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এ মন্ত্রণালয় সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ পরিচিতি ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বহাল ছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নামে পৃথক দু’টি মন্ত্রণালয়ের সৃষ্টি হয়।
১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটির সুপারিশক্রমে সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রশাসনিক কাঠামো প্রসার করে এর নাম সমাজসেবা অধিদপ্তর রাখা হয়। ১৯৮৯ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একক নামে একটি সম্পূর্ণ পৃথক মন্ত্রণালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৫৬ সালে গঠিত জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর ১৯৮৪ সালে গঠিত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট এবং ১৯৯৯ সালে গঠিত জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভাগ হিসেবে ন্যস্ত করা হয়। বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশের সামগ্রিক সরকারি বেসরকারি সমাজকল্যাণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাসমূহ হলো
পৃষ্ঠা ১৩৬

1.     সমাজসেবা অধিদপ্তর;
2.    বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ;
3.    জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন;
4.     শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল-নাহিয়ান ট্রাস্ট।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য
1.     মানব সম্পদ উন্নয়ন;
2.    দারিদ্র হ্রাসকরণ;
3.    সমাজের অনগ্রসর ও দুর্বল অংশের কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন;
4.     সামাজিক সমস্যা মোকাবেলাকরণ;
5.    ব্যক্তির সর্বোচ্চ বিকাশে সহায়তা দান।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতি বাসত্মবায়নের কৌশলগুলো হলো
1.     লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর অংশায়নের মাধ্যমে কর্মসূচির বাস্তবায়ন।
2.    সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় লক্ষ্যভুক্ত দলের মতামতের প্রতি গুরুত্বারোপ।
3.    ব্যক্তি ও পরিবারের মর্যাদার প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ।
4.     প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
5.    ফলাবর্তন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য অনুভূত চাহিদার
6.    নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য অনুভূত চাহিদার প্রতি গুরুত্বারোপ।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রুলস অব বিজনেস
অবহেলিত, দুঃস্থ, উপেক্ষিত, সমস্যাগ্রস্ত মানুষের কল্যাণ, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা সর্বজন স্বীকৃত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশের অবহেলিত, উপেক্ষিত, দারিদ্রপীড়িত এবং সামজিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমস্যায় নিপতিত মানুষের চাহিদা এবং এ জনগোষ্ঠীকে সর্বোচ্চ মানবিক মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, জাতীয় ভাবধারার সাথে সম্পৃক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ চিন্তা-চেতনায় ব্রতী হয়ে ভূমিকা পালন করছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পুনর্গঠন করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৪ সালে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার এ মন্ত্রণালয়ের জন্য নিচে বর্ণিত দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করেন
1.     সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত জাতীয় নীতি নির্ধারণ।
2.    দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, সামাজিক সুরক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়ন ইত্যাদি।
3.    সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম এবং বিষয়াবলী।
4.     বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যাবলি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ।
5.    সেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাসমূহের রেজিস্ট্রিকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ। (রেজিস্ট্রেশন এন্ড কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ এবং অর্ডিন্যান্স নং ঢখঠও অব ১৯৬১ অনুসারে)
6.    সমাজসেবা অধিদফতরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াবলী।
7.     স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুদান প্রদান।
8.    ভবঘুরে আইনের বাস্তবায়ন এবং ভবঘুরে, গরিব ও দুঃস্থ কেন্দ্র ও এতিমখানা পরিচালনা।
9.     প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাস
চরম দুর্দশাগ্রস্ত গ্রাম বাংলার ভূমিহীন কৃষক ও নারী সম্প্রদায়, স্বাস্থ্যহীন ও পুষ্টিহীন শিশু এবং লক্ষ্যহীন ভবঘুরে বেকার যুবকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান ও কর্মসংস্থান এবং পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে সম্মানজনক জীবন যাপনের অঙ্গীকার নিয়ে গ্রামীণ সমাজসেবার সূচনা। বহুমুখী ও সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ সমস্যাগুলো মোকাবেলার লক্ষ্যে গ্রামীণ সমাজসেবার সামগ্রিক কর্মসূচি রচিত।
নিচে গ্রামীণ সমাজসেবার প্রধান কর্মসূচিগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো
১. বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমঃ গ্রামীণ নিম্ন আয়ের জনগণ, বেকার, অর্ধবেকারসহ অন্যান্যদের বিভিন্ন বিষয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান গ্রামীণ সমাজসেবার গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। এর আওতায় মৎস চাষ, পশু ও হাঁস-মুরগী পালন এবং কৃষি উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া মূলধন বিনিয়োগ ও মূলধন সৃষ্টির জন্য সমবায় স্থাপন, ধানভাঙ্গা প্রকল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা, রিক্সা ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রম এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে স্থানীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় রয়েছে।
ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিবরণঃ সেলাই ও দর্জি বিজ্ঞান, এমব্রয়ডারী, বাঁশ-বেত, বৈদ্যুতিক কার্যক্রম (ওয়ারিং, ওয়েল্ডিং এবং লোহার আসবাবপত্র তৈরি), পাটের কাজ, কাঠের কাজ, তাঁত ও বয়ন কাজ, হাঁস-মুরগী পালন, গরু মোটা তাজাকরণ, কামার ও কুমারের কার্যক্রম, সব্জী চাষ, টাইপের কাজ, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স (ফ্যান, এসি, ফ্রিজ, রেডিও, টেলিভিশন এবং কলের লাঙ্গল), টিভি, রেডিও এবং ঘড়ি মেরামত, বাই-সাইকেল এবং ঘড়ি মেরামত, কম্পিউটার ব্যবহার শিক্ষা এবং পরিচালনা, স্ন্যাকস, বেকারী, সাইকেল, রিকশাভ্যান, রিকশা মেরামত ও সংযোজন, মটর সাইকেল মেরামত।
ডিসেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৯১ জনকে দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
২. পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমঃ প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে আটটি করে মাতৃকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়ে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় এটি শুরু হয়। গ্রামীণ মহিলাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে অর্থকরী কাজে অংশগ্রহণ এবং সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদের জনসংখ্যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি জ্ঞানদান, শিশুযত্ন ও প্রতিপালন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দানের মাধ্যমে পারিবারিক ও জাতীয় পর্যায়ে মহিলাদের ভূমিকাকে অর্থবহ করে তোলাই মাতৃকেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। পল্লী মাতৃকেন্দ্রের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে পরিচালিত মাতৃকেন্দ্রের দু’টি বিশেষ কর্মসূচি হলো
1.    প্রশিক্ষণ কাম উৎপাদন কেন্দ্রঃ স্থানীয় কাঁচামাল এবং চাহিদার ভিত্তিতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলাদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ-কাম-উৎপাদন স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
2.    মহিলা ঋণদান কর্মসূচিঃ মাতৃকেন্দ্রের আওতাধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত বিত্তহীন মহিলাদের পুঁজি সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংকের সহায়তায় মহিলা ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সমাজসেবা অফিসারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে ঋণ-দান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।




পৃষ্ঠা ১৫১

৩. কমিউনিটি সেন্টার (গোষ্ঠী কেন্দ্র): গ্রামীণ বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত জনগোষ্ঠীকে সংঘবদ্ধ শক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণদানের জন্য ১৯৬টি কমিউনিটি সেন্টার বা গোষ্ঠীকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। গ্রামীণ সমস্যা, সম্পদ এবং সমাধান সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সচেতন করে তোলা এর মূল লক্ষ্য।[1]
৪. সুদমুক্ত ঋণদানঃ গ্রামীণ দরিদ্র ও দুঃস্থদের অন্যতম সমস্যা পুঁজির অভাব। পুঁজি সমস্যা সমাধানে সহায়তা দানের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি চালু করা হয়। ভূমিহীন কৃষক, বেকার যুবক এবং দুঃস্থ মহিলাদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সুদমুক্ত ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ক্ষুদ্র ঋণদান কার্যক্রম বাসত্মবায়িত হচ্ছে।[2] জানুয়ারি ২০১০ পর্যন্ত মোট ৩১,৭৭,৭০৬টি পরিবার সুদমুক্ত ঘূর্ণায়মান তহবিল দ্বারা উপকৃত হয়।
৫. সম্প্রসারিত পল্লী সমাজকর্ম প্রকল্পঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম জোরদার, সম্প্রসারণ ও ব্যাপকতর করার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সাল হতে ‘সম্প্রসারিত পল্লী সমাজকর্ম’ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ৪টি পর্যায়ের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে ৫ম পর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চারটি পর্যায়ে দেশের ৩৪২টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সম্প্রসারিত পল্লী সমাজকর্ম-এর ৫ম পর্বের আওতায় মার্চ-২০০১ পর্যন্ত ৩১১টি উপজেলায় ৩০৬ লাখ পরিবারকে ৪৪.২০ কোটি টাকার ঘূর্ণায়মান তহবিল বিতরণ করা হয়েছে। চার লাখ সুবিধাভোগীকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য পল্লীর ভূমিহীন ও বিত্তহীন কৃষক, বেকার যুবক, দুঃস্থ মহিলা, বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোর, দরিদ্র ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কারিগরি দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা যোগ্যতার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সক্রিয় সহায়তা প্রদান করা।
উৎপাদনমূলক ও আয় উপার্জনকারী কর্মসূচি পরিচালনার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্কীমের মাধ্যমে লক্ষ্যভুক্ত পরিবারের উৎপাদনক্ষম ব্যক্তিকে সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদান এ প্রকল্পের মূল বৈশিষ্ট্য।
পল্লী সমাজসেবা প্রকল্পে যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে, সেগুলোর মধ্যে এ্যান ফান ড্যু মনডে (সাবেক আন্তর্জাতিক শিশু কল্যাণ তহবিল) ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল উল্লেখযোগ্য।
পল্লী সমাজসেবার প্রশাসনিক কাঠামো
গ্রামীণ সমাজসেবার প্রশাসনিক কর্মকর্তা হলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার। তিনি প্রথম শ্রেণীর মর্যাদাসম্পন্ন গেজেটেড কর্মকর্তা। তাঁকে সাহায্য করেন একজন সুপারভাইজার। সুপারভাইজারের নিচে প্রতি উপজেলায় তিনজন ইউনিয়ন সমাজকর্মী রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তাবায়ন কমিটি রয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গ্রামীণ প্রকল্প কমিটির সহায়তায় সমাজসেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউনিয়ন সমাজকর্মীগণ দায়িত্ব পালন করেন। ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের সহায়তার জন্য প্রতি ইউনিয়নে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা সমাজকর্মী রয়েছেন। জেলা পর্যায়ে একজন উপ-পরিচালক গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পরিচালক (প্রোগ্রাম) দায়িত্ব পালন করেন।

পৃষ্ঠা ১৫৩

পল্লী মাতৃকেন্দ্র
গ্রামীণ সমাজসেবা প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত মাতৃকেন্দ্রগুলোকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা কাজে ব্যবহার করাই এর লক্ষ্য। এটি একটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প। বিভিন্ন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সক্ষম দম্পতিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাই এর লক্ষ্য।
পল্লী মাতৃকেন্দ্রের উদ্দেশ্যঃ পল্লী মাতৃকেন্দ্রের মাধ্যমে জাতীয় জনসংখ্যা কার্যক্রম বাস্তবায়ন কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। পল্লীর নারী সমাজকে মাতৃকেন্দ্রের আওতায় সংগঠিতকরণ, জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে উপার্জনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং পল্লীর নারীদের পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ। এর বাইরে মাতৃকেন্দ্রের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
1.    ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে পল্লীর নারীদের স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করা;
2.    লক্ষ্যভুক্ত নারীদের পরিকল্পিত ছোট পরিবারের সুবিধা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।
3.   ভূমিহীন, দরিদ্র, নিঃস্ব, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী এবং অনগ্রসর নারী গোষ্ঠীকে মাতৃকেন্দ্র গঠনের মাধ্যমে সংগঠিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করা।
4.    লক্ষ্যভুক্ত নারীদের উৎপাদন ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পেশাগত ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান।
5.    স্বাস্থ্য, পুষ্টি, মাতৃ ও শিশুসেবা, স্যানিটেশন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ পানি ব্যবহার, সাক্ষরতা, সামাজিক বনায়ন এবং সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান, যাতে লক্ষ্যভুক্ত নারীদের জীবনযাপন উন্নত হয়।
পল্লী মাতৃকেন্দ্রের গঠন ও প্রশাসনঃ পল্লী মাতৃকেন্দ্র হলো চল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট একটি পল্লী নারী সমিতি। সদস্যদের মধ্য হতে সাধারণ মতামতের ভিত্তিতে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। নির্বাহী কমিটির একজন সভাপতি, একজন সম্পাদক এবং পাঁচজন সদস্য থাকেন। সম্পাদক মাতৃকেন্দ্রের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাহী কমিটি প্রতি মাসে একটি করে সাধারণ সভা আহবান করে নিচের বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
1.    ঋণগ্রহীতা নির্বাচন;
2.    ঋণ বন্টন এবং ঋণ আদায়;
3.   সঞ্চয় জমাদান;
4.    স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান;
5.    পরিবার পরিকল্পনা এবং সদস্যদের পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা।
নির্বাহী কমিটির সম্পাদক লক্ষ্যভুক্ত মহিলাদের সংগঠিত করে বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন করেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সাক্ষর জ্ঞান, কারিগরি প্রশিক্ষণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধকরণ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের প্রয়োজন এমন মহিলাদের চিহ্নিত করে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রেরণ।
১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে জুন ২০০৭ পর্যন্ত ৩১৮টি উপজেলায় ১২,৯৫৬ টি মাতৃকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারগণ মাতৃকেন্দ্রের কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেন। ফিল্ড সুপার ভাইজার এবং ইউনিয়ন সমাজকর্মীগণ এ ব্যাপারে তাঁকে সহায়তা করেন।
পল্লী মাতৃকেন্দ্রের কার্যক্রম
1.    স্বকর্ম সংস্থানের জন্য সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ;
2.    সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন গঠনে উৎসাহিতকরণ;
3.   পরিবার পলিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে মহিলাদের উৎসাহিতকরণ;
4.    মা ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি;
5.    স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের জন্য নারীদের বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবহারে উৎসাহিতকরণ;
6.   বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় নারীদের অনুপ্রাণিতকরণ;
7.    দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান।




পৃষ্ঠা ১৫৪


নিচের ছকে পল্লী মাতৃকেন্দ্রের কার্যক্রম, প্রদেয় সেবাসমূহ, সেবাগ্রহীতা, সেবাপ্রদান কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করা হলো।
কার্যক্রম
প্রদত্ত সেবাসমূহ
সেবাগ্রহীতা
সেবাদানকারী কর্তৃপক্ষ
পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রম
১.    পল্লী অঞ্চলে দরিদ্র নারীদের সংগঠিত করে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় আনয়ন;
২.    পরিকল্পিত পরিবার তৈরিতে সহায়তা ;
৩.    জাতীয় জনসংখ্যা কার্যক্রম
  বাস্তবায়ন;
৪.    সচেতনতা বৃদ্ধি, উদ্বুদ্ধকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন;
৫.    ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান;
৬.    লক্ষ্যভুক্ত নারীদের সংগঠিত করে সঞ্চয় বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজি গঠন।
নির্বাচিত গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা, যিনি
১.    আর্থ সামাজিক জরিপের মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত পল্লী মাতৃকেন্দের সদস্য এবং
২.    সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ ও অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির জন্য ‘ক’ ও ‘খ’ শ্রেণীভুক্ত দরিদ্রতম নারী অর্থাৎ যার মাথাপিছু বার্ষিক পারিবারিক আয় সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ;
৩.সুদমুক্ত ঋণ ব্যতীত অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির জন্য ‘গ’ শ্রেণীভুক্ত নারী যার মাথাপিছু বার্ষিক পারিবারিক আয় ২৫ হাজার টাকার উর্ধে
৩১৮টি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় এবং পল্লী এলাকায় স্থাপিত ১২,৯৫৬টি মাতৃকেন্দ্র।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের ভূমিকা
গ্রামীণ সমাজসেবা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন সমাজসেবা অফিসার। তিনি সরকারি নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
সমাজসেবা অফিসার একজন পথ প্রদর্শক, পরিবর্তন সাধনকারী, সমন্বয়কারী, প্রশিক্ষক, সংগঠক, গবেষক, পরিকল্পনা প্রণয়নকারী ইত্যাদি বহুমুখী ও গতিশীল ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁর গতিশীল ভূমিকাগুলোর বিশেষ দিক নিচে আলোচনা করা হলো
1.     পরিবর্তন প্রতিনিধিঃ সমাজসেবা অফিসার গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদেরকে আধুনিক ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে অবহিত করেন। তাদের কুসংস্কার ও অদৃষ্টবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে উন্নত জীবন ধারণের অনুকূল মানসিকতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। তিনি পরিবর্তন সাধনের পেশাগত প্রতিনিধি।
2.    প্রশিক্ষণ দানঃ নেতৃত্বের বিকাশ, দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা অর্জন এবং দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা করা সমাজসেবা অফিসারের অন্যতম দায়িত্ব।
3.    সাংগঠনিক কাজঃ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন দল ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে সুসংঘবদ্ধ করা এবং নতুন নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে তাঁকে একজন সুসংগঠকের ভূমিকা পালন করতে হয়।
4.     সমন্বয়করণঃ উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতি গঠনমূলক বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলির মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ রক্ষা করে প্রকল্পের কর্মসূচি প্রণয়ন করা। এক্ষেত্রে তিনি জনগণ ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে থাকেন।
5.    তত্ত্বাবধানঃ ইউনিয়ন ও গ্রামীণ পর্যায়ে গঠিত প্রকল্প কমিটি এবং সমাজসেবা কর্মীদের কার্যাবলি তদারক করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব।
6.    উদ্বুদ্ধকরণঃ গ্রামীণ অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও কর্মবিমুখ জনগণকে তাদের সমস্যা, সম্পদ ও সমাধান সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এবং বাস্তবায়িত কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।
7.     গবেষণা ও মূল্যায়নঃ বাস্তবায়িত কার্যক্রমের দোষত্রুটি, সফলতা, ব্যর্থতা প্রভৃতি সম্পর্কে নিয়মিত মূল্যায়ন করা এবং বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচির পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা। গ্রামীণ সমস্যা, প্রয়োজন, চাহিদা, সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষণা এবং জরিপ পরিচালনা করা তাঁর অন্যতম দায়িত্ব
পরিশেষে বলা যায়, উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের ভূমিকা প্রকল্পাধীন জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে বলে তাঁর ভূমিকা গতিশীল।





পৃষ্ঠা ১৫৫

ঘূর্ণায়মান তহবিল
ঘূর্ণায়মান তহবিল কি?
লক্ষ্যভুক্ত পরিবার কর্তৃক প্রাপ্ত সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধকালে শতকরা ১০ ভাগ হারে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়। এ সার্ভিস চার্জ ক্রমপুঞ্জিত হয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রামে ‘গ্রাম তহবিল’ সৃষ্টি করে। এ খাতে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ বরাদ্দকৃত অর্থের সমপরিমাণ হলে এ তহবিল সে গ্রামের ঘূর্ণায়মান তহবিল হিসেবে গণ্য হয় ও ঘূর্ণায়মান তহবিল আকারে ব্যবহার করা হয়।
পল্লীর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দরিদ্র জনগণের প্রবেশগম্যতা না থাকায় আর্থিক সাহায্যের জন্য তারা উচ্চসুদে এনজিও বা সনাতন উৎস হতে ঋণ গ্রহণে বাধ্য হয়। এসব দরিদ্র পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য ঋণ হিসেবে তহবিল সরবরাহ করা হয়।
সমাজসেবা অধিদপ্তর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক তহবিল সীডমানি হিসেবে লক্ষ্যভুক্ত দলকে ঋণ মঞ্জুর করে থাকে। এ তহবিল লক্ষ্যভুক্ত পরিবারের মধ্যে ঘূর্ণায়মান তহবিল ব্যবহার করা হয়। দলীয় সদস্য সর্বোচ্চ তিনবার ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করতে পারে। এ ধরনের ঋণ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার ও অর্ধবেকার শ্রমশক্তির ব্যবহারে কার্যকর অবদান রাখছে।
ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ঘূর্ণায়মান তহবিল বিতরণ করা হয়েছে ৭১৮.৫৭ কোটি টাকা। এ সময় আদায়ের হার ৮৬% ভাগ। এ সময় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত শহর সমাজসেবা, পল্লী সমাজসেবা এবং পল্লী মাতৃকেন্দ্রের অধীনে ঘূর্ণায়মান তহবিলের মাধ্যমে মোট ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৫টি পরিবার উপকৃত হয়।[1]
পল্লী সমাজসেবার সাফল্য (জুন ২০০৭ পর্যন্ত)
বিষয়
সাফল্য
মোট বিতরণকৃত তহবিল
টাকা ১৫৮৩.০১ মিলিয়ন
পুনঃবিনিয়োগকৃত ক্রমপুঞ্জিভূত তহবিল
টাকা ৪৭৩৭.৪৫ মিলিয়ন
ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা পরিবারের সংখ্যা
২.০১ মিলিয়ন
দলীয় সঞ্চয়
টাকা ৫২.০০ মিলিয়ন
আদায়ের হার
৯০%
ক্ষুদ্র ঋণের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা
১০.০৫ মিলিয়ন
প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীর সংখ্যা
১.৪৬ মিলিয়ন
সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুবিধাভোগীর সংখ্যা
৩.১৬ মিলিয়ন
গাছ লাগানোর সংখ্যা
১.১৫ মিলিয়ন চারা গাছ
পল্লী সমাজসেবা বাস্তবায়ন সমস্যাদি
গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়ন সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
1.     অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কোন নির্দিষ্ট আইনগত ভিত্তি না থাকা।
2.    ঘূর্ণায়মান তহবিলের টাকা কিস্তিতে অবমুক্তকরণ।
3.    অপর্যাপ্ত পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়ন, কারণ পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নের আধুনিকীকরণ না করা। পরীবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নে সর্ব ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার না করা। পরিবীক্ষণ ও তত্ত্বাবধায়নে প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রপাতির অভাব।
4.     মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন সমাজকর্মীদের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে অফিস/কার্যালয়ের অভাব।
5.    মূলধনের অপ্রতুলতা, আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধার অভাব, প্রশিক্ষণ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততা, গ্রাম কমিটির সীমিত ক্ষমতা, দলভুক্ত এবং গ্রাম কমিটির সদস্যদের গৃহায়নের অভাব, উপজেলা পর্যায়ে শূন্য পদে মাঠ কর্মীদের নিয়োগে বিলম্ব ও পদ শূন্য থাকা।
6.    জাতীয় পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমের জন্য কোন নীতিমালা না থাকা।
7.     অপর্যাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্প মেয়াদ।

পৃষ্ঠা ১৫৬


8.    মাঠ কর্মীদের পরিবহনের অভাব।
9.     উত্তম কাজের জন্য ইনসেন্টিভ ও পুরস্কারের অভাব।
10.   উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি, উপজেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতার কারণে মাঠ পর্যায়ে তহবিল বরাদ্দকরণে বিলম্ব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, আর্থ-সামাজিক স্কীম বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
পল্লী সমাজসেবার সমস্যা মোকাবেলার সুপারিশ
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষকগণ নিম্নলিখিত সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।
1.     কার্যক্রম জোরদারকরণঃ সম্প্রসারিত পল্লী সমাজকর্ম প্রকল্প উৎসাহব্যঞ্জক অর্থনৈতিক, জনমিতিক  এবং সামাজিক সুফল এনেছে। মূল্যায়নের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় যে, আরএসএস প্রকল্পের প্রভাব অভিষ্ট জনগোষ্ঠি, যথা গ্রামীণ দরিদ্র জনগণ, ভূমিহীন এবং সহায়হীন মহিলাদের জন্য সন্দেহাতীতভাবে ফলপ্রসু হয়েছে। প্রকল্পটি অব্যাহত রাখার দাবী জানিয়েছেন সুবিধাভোগীগণ।
2.    প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানঃ আরএসএস অভিষ্ট দলভুক্ত সদস্যদের আর্থ-সামাজিক ও জীবনধারার মানোন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানরূপে প্রমাণিত হয়েছে। সুবিধাভোগীদের ওপর প্রকল্পটি বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে। এ প্রভাবসমূহ হলো শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি, পরিবারের সদস্য সংখ্যার নিম্নমুখী গতি, ভূমিহীনদের প্রান্তিক ভূমি মালিকে রূপান্তর, স্বাস্থ্য বিধি সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
3.    শূন্যপদ পূরণঃ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ রাজস্ব ও উন্নয়ন এ দুই বাজেটের আওতায় বেতন ভাতাদি পান। রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় কিছু পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে। এ সব পদ কার্যক্রমের স্বার্থে স্বল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করা দরকার।
4.     অধিক প্রচারণা চালানোঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম বাংলাদেশে সবজেলায় বিস্তৃত হলেও জনগণ এ সম্পর্কে সচেতন নয়। জনসাধারণ সমাজসেবা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পটি সম্বন্ধে অপেক্ষাকৃত কম জানে। গণমাধ্যমে এ প্রকল্প সম্বন্ধে প্রচার কাজ চালালে তা প্রকল্প সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে আরো বেশি সচেতন করে তুলতে সহায়ক হয়।
5.    কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণঃ প্রকল্পে একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আছে। উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে অফিসসমূহে ট্রেনিং প্রদানের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামালের অভাব প্রকট। যে সব পেশার চাহিদা বেশি, সেসব পেশায় শিক্ষিত ও অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে প্রতিটি উপজেলায় বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ রয়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণ না হওয়ায় প্রশিক্ষণ কাজও সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেক উপজেলায় প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সুষ্ঠুভাবে নিরূপণ এবং চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার।
6.    স্থানীয় চাহিদাভিত্তিক কর্মসূচি প্রণয়নঃ গ্রামীণ পর্যায়ে প্রাপ্ত সম্পদ এবং চাহিদাভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ। যাতে সুবিধাভোগী প্রত্যক্ষভাবে উপকার ভোগ করতে পারে।
শিশুকল্যাণ
‘‘শিশুদের চাহিদা ও সেবাযত্ন বয়স্কদের থেকে পৃথক’’ সাম্প্রতিক এরূপ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশই হলো শিশুকল্যাণের দার্শনিক ভিত্তি। সমাজের এতিম, অসহায় ও পরিত্যক্ত শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সেবাযত্নের ধারণা প্রাচীন হলেও ‘শিশুকল্যাণ’ প্রত্যয়টি সাম্প্রতিককালে বিকাশ লাভ করে। শিশু কল্যাণ ধারণার বিকাশের মূলে রয়েছে বিগত শতাব্দীর নৃতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা, জীববিদ্যা, সামাজিক গবেষণা প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার উন্নতির ফলে শিশুদের প্রতি মানুষের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। বর্তমান বিশ্বে শিশুদের পৃথক সত্তার পূর্ণ স্বীকৃতি দিয়ে তাদের কল্যাণ এবং সুষ্ঠু বিকাশে প্রতিটি দেশ ও সমাজ সচেতন। এরূপ সচেতনতার ফলশ্রুতিই হলো সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত শিশুকল্যাণ কার্যক্রম।
শিশুকল্যাণের সংজ্ঞা
শিশুকল্যাণ প্রত্যয়টি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। বর্তমানে এটি সমাজের দুঃস্থ, অসহায়, এতিম, পরিত্যক্ত ও অপরাধপ্রবণ শিশুদের কল্যাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের সর্বস্তরের শিশুই শিশু কল্যাণের পরিধিভুক্ত।
সাধারণ কথায় শিশুদের আর্থ-সামাজিক ও মনো-দৈহিক কল্যাণে নিয়োজিত কার্যক্রমের সমষ্টিই শিশুকল্যাণ। সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, ‘‘শিশুকল্যাণ হলো মানবসেবা ও সমাজকল্যাণ কর্মসূচি এবং আদর্শের সে অংশ, যেগুলো শিশুর সংরক্ষণ, সেবা এবং সুস্থ বিকাশে নিয়োজিত। শিশুকল্যাণ কার্যক্রম শিশুর ইতিবাচক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অবস্থা প্রতিরোধের লক্ষ্যে পরিকল্পিত’’।
হ্যাজেল ফ্রেডারিকসেন এর সংজ্ঞানুযায়ী, ‘‘শিশুকল্যাণ বলতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গৃহীত সে সব সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং দৈহিক কার্যক্রমকে বুঝায়, যেগুলো সকল শিশুর দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানবিক, আবেগীয় উন্নতি ও সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত।’’ সুতরাং বলা যায়,


পৃষ্ঠা ১৫৭

শিশুকল্যাণ বলতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গৃহীত সেসব কার্যাবলির সমষ্টিকে বুঝায়, যেগুলো শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক তথা সার্বিক কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত। শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ সাধনে সহায়তা করাই শিশুকল্যাণের মূল লক্ষ্য।
শিশুকল্যাণের বৈশিষ্ট্য
1.     শিশুকল্যাণের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি শিশুর জন্মের পূর্ব থেকে শুরু হয় এবং কৈশোর পর্যন্ত শিশুদের সার্বিক কল্যাণ সাধন নিশ্চিত করে। শিশুকল্যাণের এ বৈশিষ্ট্যই একে অন্যান্য কর্মসূচি থেকে পৃথক সত্তা দান করেছে।
2.    সর্বজনীনতা শিশুকল্যাণের অপর প্রধান বৈশিষ্ট্য। সমাজের বিশেষ শ্রেণীর শিশুদের কল্যাণে এটি সীমাবদ্ধ নয়। সর্বস্তরের শিশুর সার্বিক কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধানের প্রচেষ্টা এতে করা হয়।
3.    পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক পরিবেশের সকল দিকই শিশুকল্যাণের আওতাভুক্ত।
4.     শিশুকে সমাজের সুস্থ ও সম্পদশালী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুর দৈহিক, মানসিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল দিকের সমন্বিত ও সুসংহত কল্যাণ সাধনের প্রতি সমান গুরুত্ব আরোপ।
5.    শিশুকল্যাণ কার্যক্রমে অনেক সময় সরাসরি শিশুদের সাহায্য না করে পারিবারিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক প্রতিকূল অবস্থা দূর করে শিশুদের সার্বিক কল্যাণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়।
শিশুকল্যাণের উদ্দেশ্য
শিশুকল্যাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অত্যন্ত ব্যাপক। শিশুর নৈতিক, মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিকের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশ সাধনে সহায়তা দান শিশুকল্যাণের বৃহত্তর লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত। শিশুকল্যাণের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো
1.     সুস্থ ও সবল শিশু জন্মলাভে সহায়তা দান।
2.    শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশ ও উন্নতির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
3.    শিশুর সার্বিক বিকাশের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য শিশু পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দান।
4.     শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা ও অন্তর্নিহিত ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।
5.    শিশু শিক্ষা, চরিত্র গঠন এবং নির্মল চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
6.    সকল প্রতিকূল এবং শিশুদের সামগ্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
7.     দৈহিক, মানসিক এবং সামাজিক ও আর্থিক পঙ্গু শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করে সম্পদশালী সদস্য হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করা।
8.    সব শ্রেণীর শিশুর ন্যূনতম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করা।
9.     শিশুর সুস্থ বিকাশের প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
পরিশেষে বলা যায়, শিশুকল্যাণের মূল লক্ষ্য হল এমন এক সুন্দর, সুস্থ, রুচিশীল, মেধাবী ও সম্পদশালী ভবিষ্যত বংশধর গড়ে তোলা; যাদের হাতে আগামী পৃথিবী নিশ্চিন্তে সমর্পণ করা যায়।
শিশুকল্যাণের মৌলিক উপাদান
যে সব অপরিহার্য দিক ও বিষয়াবলীর সমন্বয়ে সামগ্রিক শিশুকল্যাণ কার্যক্রম আবর্তিত, সে সব বিষয়গুলোর সমষ্টিই শিশুকল্যাণের মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
শিশু কল্যাণের ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিধির আওতাভুক্ত প্রধান উপাদানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো
1.     গর্ভবতী মায়ের পরিচর্যা বা জন্ম-পূর্ব শিশু সেবা।
2.    শিশুর পরিচর্যা ও লালন-পালন সম্পর্কে পিতা-মাতার শিক্ষা।
3.    প্রসূতি মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য।
4.     মা ও শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা।
5.    অনুকূল গৃহ পরিবেশ।
6.    শিশু শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি।
7.     শিশুদের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান।
8.    অত্যাচার, নিপীড়ন, বঞ্চনা, উপেক্ষা প্রভৃতি হতে শিশুদের রক্ষা করা।
9.     অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দান।
10.   সুষ্ঠু সামাজিক পরিবেশ।
পৃষ্ঠা ১৫৮

11.   নির্মল ও গঠনমূলক খেলাধূলা এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
উপরিউক্ত দিকগুলো শিশুকল্যাণের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। এগুলো ছাড়া শিশুকল্যাণ কার্যক্রম পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না।

শিশুদের মৌল চাহিদা
মানব শিশু সহজাত অসহায়ত্ব নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মগত অসহায়ত্ব থেকে শিশুকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কতগুলো মৌল চাহিদা পূরণ করতে হয়। শিশুদের মৌল চাহিদা প্রকৃতিগত দিক হতে বয়স্কদের মৌল চাহিদা হতে ভিন্ন। মৌল মানবিক প্রয়োজন যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, চিত্তবিনোদনের বাইরেও শিশুদের কতগুলো মৌল চাহিদা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশুদের মৌল চাহিদাগুলো হলো
1.     পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য।
2.    স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান এবং পরিধান।
3.    সকল প্রকার নির্যাতন হতে শিশুকে রক্ষা করা।
4.     সর্বাবস্থায় শিশুর নিরাপত্তা বিধান।
5.    স্নেহ, ভালবাসা ও লালন-পালন।
6.    চিকিৎসা ও সেবা যত্ন।
7.     সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ।
8.    সামাজিক ও নৈতিক বিকাশের উপযুক্ত শিক্ষা।
9.     শিশুর উপযুক্ত চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশে শিশুকল্যাণের গুরুত্ব
শিশুরা যে কোন দেশ ও জাতির ভবিষ্যত। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। সুতরাং সম্পদশালী জাতি গঠনের পূর্বশর্ত হল সুস্থ ও সবল শিশু। সুষম শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশ সাধনের মাধ্যমে শিশুদের যোগ্য নাগরিক রূপে গড়ে তোলার জন্য শিশুকল্যাণের গুরুত্ব অপরিসীমসর্বস্তরের শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষাদান, ব্যক্তিত্ব গঠন ও সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সম্পদশালী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশে শিশুকল্যাণের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে বাংলাদেশে শিশুকল্যাণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরা হলো
1.     শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর উচ্চহার রোধঃ ২০০১ সালের আদমশুমারীর তথ্যানুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৩ ভাগের বয়স চার বছরের নিচে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৮ ভাগ। এ হিসেবে প্রতি বছর ২২ লাখের বেশি শিশু সংযোজিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি হাজারে স্থূল শিশু মৃত্যুর হার ৬.৩। এক বছরের কম প্রতি হাজার জীবিত জন্মে শিশু মৃত্যুর হার ৪৩ জন। এক থেকে চার বছর বয়সী প্রতি এক হাজার শিশু মৃত্যুর হার ৩.৬ জন। মাতৃ মৃত্যুর হার প্রতি হাজার প্রসবে ৩.৫ জন।[2] সুতরাং বাংলাদেশে শিশু এবং প্রসূতি মৃত্যুর উচ্চ হার প্রতিরোধে এবং শিশু ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার নিশ্চয়তার জন্য শিশুকল্যাণের প্রয়োজন রয়েছে।
2.    শিশু পুষ্টির উন্নয়নঃ বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু অন্ধত্ব বরণের পাশাপাশি ছ’বছরের কম বয়সী লাখ লাখ শিশুর মধ্যে অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক গর্ভবতী মহিলা রাতকানা রোগে ভোগে। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে শিশুকল্যাণ কার্যক্রমের তাৎপর্য অপরিসীম।
3.    শিশু শিক্ষাঃ ২০০১ সালের আদমশুমারীর তথ্যানুযায়ী পাঁচ থেকে নয় বছরের শিশুদের শতকরা ৪৯.৬৯ ভাগ স্কুলে যায়। ৫০.৩১ ভাগ শিশু স্কুলে যায় না। অন্যদিকে ১০-১৪ বছরের শিশুদের ৬৩.৯৫ ভাগ স্কুলে যায়, প্রায় ৩৬ ভাগ শিশু স্কুল থেকে বঞ্চিত। প্রতি বছর যে হারে স্কুলগামী শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, সে তুলনায় শিক্ষার সুযোগ বাড়ছে না। সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায় বর্তমানে স্কুলগামী শিশুর উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় শিশু শিক্ষার স্বার্থে শিশুকল্যাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।[3]
4.     শিশুশ্রম রোধ : বাংলাদেশে শিশুশ্রম প্রতিরোধে শিশুকল্যাণ কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। ইউনিসেফ-এর জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৫-১৪ বছর বয়ক্রমের শতকরা প্রায় ২৫.৫৫ ভাগ শিশু শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। অপরিণত বয়সে শ্রমদানের কারণে, অনাহারে, অর্ধাহারে ও অপুষ্টির কারণে অন্ধ-বিকলাঙ্গ হচ্ছে হাজার হাজার শিশু। বাংলাদেশে সাড়ে তিন কোটি শিশু-কিশোর কোন না কোনভাবে শ্রমের সঙ্গে

পৃষ্ঠা ১৫৯

যুক্ত। এসব শিশুরা ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছে।[4] বাংলাদেশে শিশুদের অর্থনৈতিক কারণে এবং পরিবারিক দারিদ্রের প্রভাবে উপার্জনে নিয়োজিত হতে হয়। গ্রাম ও শহরে বিপুল সংখ্যক শিশু শ্রমে নিয়োজিত। ১৯৯৯-২০০০ সালে শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী ১০-১৪ বছরের মোট শিশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার। শিশু শ্রমশক্তি ছিল ৬৭ লাখ ৭৭
হাজার। শ্রমে নিয়োজিত ছিল প্রায় ৬৩ লাখ।[5] পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০০২-০৩ এর তথ্যানুযায়ী ৫-১৭ বছর বয়সী শিশু শ্রমিকের মোট সংখ্যা ৭৯ লাখ চার হাজার। যা ১৯৯৫-৯৬ সালে ছিল ৬২ লাখ ৯৮ হাজার। শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শিশু কল্যাণের গুরুত্ব অপরিসীম।
5.    ছিন্নমূল শিশুদের কল্যাণঃ সমাজে অসুবিধাগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে এতিম ও দুঃস্থ শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী শহরমুখী হওয়ায় শহরাঞ্চলে দুর্দশাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রতিবছর ছিন্নমূল ও ভাসমান শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ভাসমান শিশুরা অত্যাচার, নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হয়ে অপরাধপ্রবণ হতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশে কিশোর অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের সংরক্ষণে শিশুকল্যাণ কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
6.    প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণঃ বিশ্ব পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু। প্রতিদিন ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে অসংখ্য শিশু অন্ধত্ব বরণ করছে। জন্মগত কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপুষ্টি, রোগের আক্রমণ প্রভৃতি কারণে অসংখ্য শিশু প্রতিবন্ধী হচ্ছে।
বাংলাদেশে দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের অভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। এদের কল্যাণে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। গ্রামকেন্দ্রিক কোন কার্যক্রম গড়ে ওঠেনি। ফলে অসংখ্য প্রতিবন্ধী শিশু অস্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।
উপরিউক্ত তথ্যাবলী হতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র, সামাজিক বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জনসংখ্যা বিস্ফোরণ প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের অসংখ্য শিশু ন্যূনতম মৌল চাহিদা পূরণ হতে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন-যাপনে বাধ্য হচ্ছে। এসব শিশু-কিশোরদের মৌল চাহিদা পূরণে সহায়তা দানের লক্ষ্যে এদেশে শিশুকল্যাণ কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে সুন্দর, সুস্থ, রুচিশীল, মেধাবী ও সম্পদশালী ভবিষ্যত বংশধর গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশুকল্যাণ কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।



[1].    অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯।
[2].    বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোঃ উদ্বৃত অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯।
[3].    আদমশুমারী রিপোর্ট ২০০১।
[4].   বাংলাদেশের শ্রমজীবী-মানুষঃ মুস্তাফা মান্নাঃ বাংলা একাডেমী, ঢাকা
[5].   পরিসংখ্যান পকেট বুক ২০০৮, পৃঃ ১৫৬।

View Foundation Digital Talking Library is developed and maintained by Sigma Enterprise.
Theme designed by Imtiaz
All rights are reserved. Any kind of reproduction of any mp3 files and text files is prohibited. If any organization or any person is found copying or reproducing any of the material will be punished under copy right law.